ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ , ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ভারতে নিষিদ্ধ ১৬ পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল, বিবিসিকে সতর্কবার্তা ইউক্রেন যুদ্ধে সৈন্য পাঠানোর কথা নিশ্চিত করলো উত্তর কোরিয়া বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ২৬টি রাফালে এম যুদ্ধবিমান কিনতে ফ্রান্স-ভারত চুক্তি ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহত ৭৮ পাকিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহত ২৩ ১৩০টি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে তাক করা আছে : পাকিস্তানের মন্ত্রী রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে শতাধিক ড্রোন হামলা করছে ইউক্রেন: মস্কো স্পিরিট অ্যারো সিস্টেমসের সম্পদ কেনার চূড়ান্ত চুক্তি করলো এয়ারবাস ওষুধ রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড় চায় সিঙ্গাপুর অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ হারলো মায়ামি এফএ কাপের ফাইনালের টিকেট পেলো ম্যানসিটি টটেনহ্যামকে হারিয়ে শিরোপা জিতল লিভারপুল প্রথম ম্যাচে জর্ডানের মুখোমুখি বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করলো আরসিবি বাংলাদেশের সামনে খড়কুটার মতো উড়ে গেলো শ্রীলঙ্কা তাইজুলকে প্রশংসায় ভাসালেন তামিম সাগরিকায় শেষ বিকেলে তাইজুলের দাপট কলাপাড়ায় চোরকে পুলিশে দিয়ে বিপাকে গ্রামবাসী ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলো বাংলাদেশি ৭ যুবক

বৈধ বারে নারকোটিক্সের প্রতিনিধি ছাড়া র‍্যাবের অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন!

  • আপলোড সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৭:০০:৫২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৪-২০২৫ ০৭:০০:৫২ অপরাহ্ন
বৈধ বারে নারকোটিক্সের প্রতিনিধি ছাড়া র‍্যাবের অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন!
রাজধানী ঢাকার সরকার অনুমোদিত বার ও রেস্টুরেন্টে পুলিশের বিশেষ বাহিনী-র‍্যাব বা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিতর্কিত অভিযান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রতিনিধি বা অনুমতি ছাড়া দেশের অনুমোদিত বারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এককভাবে অভিযান পরিচালনার আইনগত বৈধতা না থাকলেও র‌্যাবের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠছে। অনুমোদিত বারের বৈধ কাগজপত্র সঠিক থাকলেও মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা আদায়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অজুহাতে ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযানের নামে লুটপাট করা হচ্ছে বলে বার মালিক সমিতি অভিযোগ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ২০ থকে ২৩ ধারা পর্যন্ত বারে অভিযানের বিষয়ে বলা রয়েছে। আইনের ২০ ধারায় বারে প্রবেশ ও ইত্যাদি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালককে। এই ধারায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত বারে মহাপরিচালক বা তার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রবেশ, জব্দ ও তল্লাশি করতে পারবে। তবে অন্য কোনো বাহিনীর কথা বলা নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বারের অনুমোদন বা লাইসেন্স মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেয়, তারাই এর দেখভাল করেন। বারে কোনো সংস্থা বা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই মহাপরিচালকের অনুমোদন নিতে হবে এবং তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখতে হবে।
অভিযোগে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও র‌্যাবে পুরোনো কিছু কর্মকর্তা এখনও বহাল আছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারা নানা অজুহাতে বিভিন্ন বারে অভিযানের নামে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতো অন্যথায় মামালা দিত।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে টাইগার বারে অভিযান চালিয়ে বিপুল দেশি-বিদেশি মদসহ চারজনকে আটক করেছে র‍্যাব। অভিযানের পর র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিতে টাইগার বার নামে নিবন্ধিত কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। রেস্টুরেন্টটি বেআইনিভাবে নামটি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
অন্যদিকে টাইগার রেস্টুরেন্ট এন্ড বারের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের বৈধ বার লাইসেন্স রয়েছে। যার লাইসেন্স নম্বর ০১/২০২১/২০২২। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে র‌্যাব অভিযান চালানোর সময় বারের লাইসেন্স দেখতে চায়নি। তারা কোনো কথা শুনতে চাননি। এমনকি বারে বৈধ ও অবৈধ এই দুই ধরনের মদ ও বিয়ারও শনাক্ত করেনি। তারা ঢালাওভাবে সব মদ ও বিয়ার জব্দ করে। এছাড়া অভিযান চালানোর সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তাও সঙ্গে আনেননি।
এদিকে র‌্যাবের এ অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে কর্মকর্তা ডেপুটি ডাইরেক্টর মানজারুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২০ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স বলে মাদকদ্রব্য বিক্রয়ের স্থানে প্রবেশ ও পরিদর্শন করার ক্ষমতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক অথবা তাহার নিকট হইতে সাধারণ বা বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসারকে দেয়া হইয়াছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এই ক্ষমতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক পর্যন্ত অর্পণ করেছেন।’
 জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো বারে ভিন্ন কোনো সংস্থা অভিযান চালাতে গেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে অবশ্যই ইনফর্ম করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালাতে হবে।
 এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) জাহাঙ্গীর বলেন, র‌্যাব কিংবা ভিন্ন যেকোনো সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ছাড়া কোনো বৈধ কিংবা লাইসেন্সকৃত বারে এ ধরনের অভিযানে যেতে পারে না। এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টেও একটি রিট রয়েছে। এ ধরনের অভিযান না করতে আমাদের সংগঠন থেকেও র‌্যাব মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে টাইগার বারে র‌্যাবের অভিযান নিয়ে যতদূর জেনেছি, তাতে র‌্যাব এ অভিযানে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তাদের অভিযানের পদ্ধতি সঠিক হয়নি। তাছাড়া তারা লকার পর্যন্ত ভেঙেছে। অনেক গরমিল রয়েছে। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আজ শনিবার বৈঠক হবে। বৈঠকে সীদ্ধান্ত হলে এ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিকার পেতে আমরা আদালতের আশ্রয় নেবো।
দেশে যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় অনেক ছোট-বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন। তখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এভাবে অভিযান দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত বলছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযান ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ বা কারো প্রতি বিদ্বেষের অংশ।
বার মালিকরা জানায়, সংস্থাটির কিছু সদস্য ও সোর্স কয়েকটি বারে বিনামূল্যে অ্যালকোহল সেবন, পারসেল নেওয়ার পাশাপাশি মাসোহারা দাবি করে আসছেন। ওই মাসোহারা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর কয়েকটি বারে অভিযান চালানোর হুমকি দেয়। বিষয়টি বার মালিকরা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উটেছে গত বুধবার র‌্যাব-১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর আহনাফ ও আশিকের নেতৃত্বে বৈধ বারে অভিযান হয়ে থাকে। অভিযানের শুরুতেই র‌্যাব সদস্যরা বারের সিসি ক্যামেরা বিকল করে এবং ফুটেজ খুলে নিয়ে যায়।
বার কর্তৃপক্ষ জানায়, র‌্যাব সদস্যরা টাইগার বার থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা, চারটি ল্যাপটপ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাতটি মোবাইল ফোন, অফিসিয়াল ফাইল (লাইসেন্স, আমদানি, উত্তোলন সংক্রান্ত ও সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র), ক্রাউন ভেবারেজ থেকে উত্তোলনকৃত বৈধ বিয়ারের শতাধিক কেস, কেরু এ্যান্ড কোং-এর বৈধ প্রায় ৫০ কেস এবং ব্রান্ড রেজিস্ট্রেশন থাকা অ্যালকোহল জব্দ করে। এ সময় তারা বারের কর্মকর্তাদের মারপিট করে এবং ৪ জনকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে উত্তরার টাইগারসহ অন্যান্য বারে অভিযানের বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাউকে জানায়নি র‌্যাব। মহাপরিচালকের কোনো প্রতিনিধিও ছিলেন না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ঢাকা উত্তরা জোন) শামীম আহমেদ জানান, টাইগার বারে অভিযানের বিষয়ে অধিদফতর অবগত নয়। এছাড়া অন্যান্য বারে অভিযানের বিষয়েও তাদের জানানো হয়নি। এর আগে মহাখালীতে বেরন নামে একটি বারে অভিযান চালিয়ে নগদ টাকা ও অ্যালকোহল জব্দ করে নিয়ে যায় র‌্যাব সদস্যরা। একই মাসে বনানী ১১নম্বর সড়কের একটি বার এবং গুলশান আগোরা ভবনের চতুর্থ তলায় একটি বারে অভিযান চালায় সংস্থাটি। ওই বার তিনটির কর্তৃপক্ষ জানায়, নগদ টাকা ও জব্দ করে নিয়ে যাওয়া কোটি কোটি টাকার অ্যালকোহলের তালিকা তাদের দেওয়া হয়নি।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-তারা ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছেন। অথচ অভিযানের নামে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। এর আগে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ জুরাইনের আইরিস পাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে র‌্যাব ও কাস্টমস যৌথভাবে অভিযান চালায়। ওই অভিযান চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে বার মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা করেন। ওই মামলায় তারা দাবি করেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারা লঙ্ঘন করে তাদের বার অ্যাণ্ড রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর উচ্চ আদালত ওই অভিযানকে অবৈধ ঘোষণা করে নির্দেশনাও দেন।
সরকারের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব বিভিন্ন বার  রেস্টুরেন্টে অভিযানে মালিকদের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ‌র‌্যাব ১ এর অধিনায়ক  লে. কর্নেল জাহিদুল করিম জানান লিখিতভাবে কোন অপারেশন সম্পর্কে কোথায় অভিযোগ কি কেউ করেছেন?  আইনের কোন ব্যতিক্রম থেকে থাকলে ২৪ ঘণ্টার মাঝে আমদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে আসলেই সব সমাধান হয়ে যেত। র‌্যাব পরিচয়ে যারা বিনামূল্যে মদ খেতে যায় তাদের শনাক্ত করতে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ